Header Ads

Header ADS

কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ ও কারণ

কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ ও কারন


কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ, colon cancer, কোলোন ক্যান্সারের চিকিৎসা
কোলোন ক্যান্সার


আপনি কোলোন ক্যান্সারের মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন না তো? কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক


ক্যান্সার শব্দটি শুনলেই আমরা শিউরে উঠি। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে কোলোন ক্যান্সার বা কলোরেক্টাল ক্যান্সার বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। এই রোগটির ভয়াবহতা এতোটাই মারাত্মক যে, অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে দ্রুত এটি প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে। তবে সুখবর হলো, সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ এবং আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে কোলোন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি কি এই কোলোন ক্যান্সারের মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন? এবং কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা আসলে কতটা মারাত্মক? আজকের প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে আপনি রোগটি সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।


কোলোন ক্যান্সার কী?


কোলোন ক্যান্সার হলো বৃহদন্ত্রের (large intestine) ক্যান্সার। যা কোলোন বা মলাশয়ে (rectum) শুরু হয়। কোলন এবং মলাশয় সম্মিলিতভাবে কলোরেক্টাল নামেও পরিচিত। তাই অনেক সময় এই ক্যান্সারকে কলোরেক্টাল ক্যান্সারও বলা হয়। বেশিরভাগ কোলোন ক্যান্সার ছোট একটি নিরীহ পলিপ (polyp) থেকে শুরু হয়। যা সময়ের সাথে সাথে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। এই পলিপগুলো সাধারণত কোলোনের ভেতরের আস্তরণে তৈরি হয়। সঠিক সময়ে কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং এবং পরীক্ষা না করালে এই পলিপগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এগুলো ক্যান্সারের কোষে পরিণত হয়ে বিভাজন শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগটি ধরা পড়লে কোলোন ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক সহজ হয় এবং সাফল্যের হারও বেশি থাকে। কিন্তু রোগটি ছড়িয়ে পড়লে কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা বেড়ে যায়।


কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক?


কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা নির্ভর করে রোগটি কোন পর্যায়ে (stage) আছে তার উপর। প্রাথমিক পর্যায়ে (Stage 0, I, II) কোলোন ক্যান্সার সাধারণত বৃহদন্ত্রের দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই পর্যায়ে শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করে রোগীকে প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। এই ক্ষেত্রে কোলোন ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক কার্যকর হয় এবং কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়।


কিন্তু যদি রোগটি অগ্রসর পর্যায়ে (Stage III, IV) পৌঁছে যায়, অর্থাৎ ক্যান্সার কোষগুলো লিম্ফ নোড বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে (যেমন লিভার, ফুসফুস) ছড়িয়ে পড়ে, তখন কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা অনেক বেড়ে যায়। এই পর্যায়ে চিকিৎসা করা অনেক জটিল হয়ে পড়ে। তখন রোগীর জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অগ্রসর কোলোন ক্যান্সারের চিকিৎসা সাধারণত কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি বা ইমিউনোথেরাপির মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে করা হয়। যা বেশ কষ্টদায়ক। আর তখন কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা সফল নাও হতে পারে। তাই কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা এবং সময়মতো কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো অত্যন্ত জ্রুরী। কোলন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কমাতে সচেতনতাই এর প্রধান উপায়। কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।


বিশ্বজুড়ে কোলোন ক্যান্সার মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ার পেছনে এর ভয়াবহতা একটি বড় কারণ। অনেক সময় রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো স্পষ্ট না হওয়ায় রোগীরা এটিকে সাধারণ পেটের সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান। যখন লক্ষণগুলো তীব্র হয় এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, ততক্ষণে রোগটি অনেক দূর এগিয়ে যায়। এই নীরব প্রকৃতিই কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা বাড়িয়ে তোলে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোলোন ক্যান্সারের উন্নত পর্যায়ের রোগীদের বেঁচে থাকার হার প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীদের চেয়ে অনেক কম। তাই কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা এবং কোলোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। কোলন ক্যান্সারের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে স্ক্রীনিং অপরিহার্য।


আপনি কি কোলোন ক্যান্সারের মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন? কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি ফ্যাক্টরঃ


কোলোন ক্যান্সার যে কারোরই হতে পারে। তবে কিছু কারণ কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আপনার যদি এই ঝুঁকি ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক থেকে থাকে, তবে আপনার কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি হতে পারে। কোলন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কমাতে এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। নিচে কোলোন ক্যান্সারের প্রধান ঝুঁকিগুলো আলোচনা করা হলো:


১. বয়স: কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বয়সের সাথে সাথে বাড়ে। বেশিরভাগ কোলোন ক্যান্সার ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। তবে সম্প্রতি তরুণদের মধ্যেও কোলোন ক্যান্সার বাড়ছে। যা একটি উদ্বেগের কারণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই নির্দিষ্ট বয়সের পর কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো অত্যন্ত জরুরী। বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ কোলোন ক্যান্সারের কারণ। আপনার বয়স যদি ৫০ এর বেশি হয়, তাহলে আপনার কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।


২. পারিবারিক ইতিহাস: আপনার যদি কোলোন ক্যান্সার বা অ্যাডেনোমেটাস পলিপের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে আপনার কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। বিশেষ করে যদি আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন বা সন্তানের এই রোগ হয়ে থাকে, তবে আপনার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি। কিছু বংশগত সিনড্রোম, যেমন ফেসিয়াল অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস (FAP) বা লিঞ্চ সিনড্রোম (Lynch syndrome), কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। পারিবারিক ইতিহাস জানা কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি কোলোন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনারও কোলোন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।


৩. ব্যক্তিগত ইতিহাস: আপনার যদি অতীতে কোলোন ক্যান্সার হয়ে থাকে এবং তার চিকিৎসা না হয়ে থাকে, অথবা আপনার যদি অ্যাডেনোমেটাস পলিপের ইতিহাস থাকে, তবে আপনার আবার কোলোন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অ্যাডেনোমেটাস পলিপ হলো এক ধরনের পলিপ যা ভবিষ্যতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই পলিপ অপসারণের পরও নিয়মিত ফলো-আপ এবং কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো আবশ্যক। আপনার যদি পলিপের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।


৪. প্রদাহজনক পেটের রোগ (Inflammatory Bowel Disease - IBD): ক্রোহনস ডিজিজ (Crohn's disease) বা আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative colitis)-এর মতো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনক পেটের রোগ কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই রোগগুলোতে কোলোনের আস্তরণে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থাকে, যা ক্যান্সারের বিকাশে সহায়তা করে। এই রোগগুলো থাকলে নিয়মিত কোলন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো জরুরী। আইবিডি রোগীদের কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।


৫. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:

খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস (processed meat) এবং লাল মাংস (red meat) বেশি খেলে এবং আঁশযুক্ত খাবার, ফল ও সবজি কম খেলে কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস একটি বড় কোলোন ক্যান্সারের কারণ।


শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: যারা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করেন না, তাদের কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। নিয়মিত ব্যায়াম কোলোন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।


স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। স্থূলতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কোলোন ক্যান্সারের কারণ।


ধূমপান: ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যান্সার নয়। কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। ধূমপান কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা বাড়াতে পারে। ধূমপান একটি অন্যতম কোলোন ক্যান্সারের কারণ।


অতিরিক্ত মদ্যপান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মদ্যপান কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।


৬. ডায়াবেটিস: টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোলোন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।


৭. বিকিরণ থেরাপি (Radiation therapy): পূর্বে পেটে বা পেলভিসে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিলে তা পরবর্তী জীবনে কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


এই ঝুঁকি ফ্যাক্টরগুলো আপনার কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে মনে রাখবেন, কোলোন ক্যান্সার এমন ব্যক্তিরও হতে পারে যার কোনো পরিচিত ঝুঁকি ফ্যাক্টর নেই। তাই ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং কোলোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কমাতে সাহায্য করে। আপনার যদি এই ঝুঁকিগুলো থাকে, তবে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং পরিকল্পনা করা উচিত।


কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ (Colon Cancer Symptoms)ঃ


কোলোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় স্পষ্ট হয় না বা অন্যান্য সাধারণ পেটের সমস্যার মতো মনে হতে পারে। এই নীরবতাই কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা বাড়িয়ে তোলে। যখন লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তখন রোগটি হয়তো কিছুটা অগ্রসর হয়ে গেছে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোলোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা জরুরী। নিচে কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো:


১. মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন: এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ। হঠাৎ করে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হওয়া, অথবা মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি বা মলের ধরণের পরিবর্তন। যা কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়। মলের ধারাবাহিকতা বা আকারের পরিবর্তনও কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।


২. মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত বা মলের সাথে রক্ত: মলের সাথে উজ্জ্বল লাল রক্ত (সাধারণত মলাশয়ের কাছাকাছি ক্যান্সার) বা কালো ও আলকাতরার মতো মল (সাধারণত কোলোনের উপরের অংশে ক্যান্সার) কোলোন ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। তবে অনেক সময় রক্তক্ষরণ এতো সামান্য হয় যে খালি চোখে দেখা যায় না। যা কেবল মল পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। মলদ্বারের রক্তপাত কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। যদিও তা পাইলস বা ফিশারের কারণেও হতে পারে।


৩. পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি: পেটে ক্র্যাম্পিং, গ্যাস বা ব্যথা যা সহজে ভালো হয় না, তা কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি মলত্যাগের সাথে সম্পর্কিত হয়। পেট ফাঁপা বা অস্বস্তিও কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।


৪. মনে হওয়া যে পেট সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়নি: মলত্যাগের পর মনে হওয়া যে মলত্যাগ সম্পূর্ণ হয়নি, বা বারবার মলত্যাগের বেগ আসা । এটি মলাশয়ের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। এটিও একটি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ।


৫. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি: অকারণে শরীর দুর্বল লাগা বা খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা হলে এমনটা হতে পারে। ক্লান্তি ও দুর্বলতা কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।


৬. অকারণে ওজন কমে যাওয়া: ডায়েট বা ব্যায়াম না করে হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া ক্যান্সারের একটি সাধারণ লক্ষণ। যা কোলোন ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণ।


এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে ভয় না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, এই লক্ষণগুলো সবসময় কোলোন ক্যান্সারের কারণে নাও হতে পারে। তবে এগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। প্রাথমিক পর্যায়ে কোলোন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো চেনা গেলে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করার আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়। কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা থাকাটা আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।


কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং (Colon Cancer Screening)-ভয়াবহতা কমানোর উপায়ঃ


কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো। স্ক্রীনিং পরীক্ষা ক্যান্সার হওয়ার আগেই পলিপ শনাক্ত করে অপসারণ করতে সাহায্য করে। কিংবা ক্যান্সারকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে (যখন চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর) শনাক্ত করতে পারে। যখন কোলোন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তখন কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় উজ্জ্বল হয়। কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যমে মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিভিন্ন ধরনের কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং পরীক্ষা উপলব্ধ আছে:


১. কোলনস্কোপি (Colonoscopy): এটি কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিংয়ের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পদ্ধতিতে একটি নমনীয়, আলোকিত টিউব (কোলনস্কোপ) মলদ্বার দিয়ে প্রবেশ করিয়ে পুরো কোলন পরীক্ষা করা হয়। পলিপ দেখা গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা হয় এবং বায়োপসির জন্য পাঠানো হয়। এটি ক্যান্সারের পূর্বাভাস দিতে পারে এবং কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। কোলনস্কোপি হলো সবচেয়ে কার্যকর কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং পদ্ধতি। নিয়মিত কোলনস্কোপি করালে কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এটি কোলোন ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব জরুরী।


২. সিগময়ডোস্কোপি (Sigmoidoscopy): এই পদ্ধতিতে কোলনের নিচের অংশ (সিগময়েড কোলন) এবং মলাশয় পরীক্ষা করা হয়। এটি কোলনস্কোপির চেয়ে কম বিস্তৃত। তবে এটিও পলিপ বা ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে।


৩. মল-ভিত্তিক পরীক্ষা (Stool-based tests)ঃ

ফেকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট (FOBT) বা ফেকাল ইমিউনোকেমিক্যাল টেস্ট (FIT): এই পরীক্ষাগুলো মলের মধ্যে লুকানো রক্ত শনাক্ত করতে পারে। যা পলিপ বা ক্যান্সারের কারণে হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে পজিটিভ হলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কোলনস্কোপি করাতে হয়। মল-ভিত্তিক পরীক্ষা কোলোন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে রক্ত শনাক্ত করতে পারে।

ডিএনএ স্টুল টেস্ট (FIT-DNA): এটি মলের মধ্যে রক্ত এবং ক্যান্সারের কোষ থেকে ঝরে পড়া ডিএনএ পরিবর্তনের খোঁজ করে।


গড় ঝুঁকির (average risk) ব্যক্তিদের জন্য সাধারণত ৫০ বছর বয়স থেকে কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যাদের কোলোন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস বা অন্যান্য ঝুঁকি ফ্যাক্টর আছে, তাদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই স্ক্রীনিং শুরু করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার জন্য কোন ধরনের কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং উপযুক্ত এবং কখন শুরু করা উচিত, তা জানার জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। নিয়মিত কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করানো কোলোন ক্যান্সারের ভয়াবহতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি কোলোন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা পালন করে। কোলোন ক্যান্সারের স্ক্রীনিং জীবন বাঁচাতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.