Header Ads

Header ADS

ব্ল্যাকহোল(Blackhole) কি- ব্ল্যাকহোল কাকে বলে

ব্ল্যাকহোল(Blackhole) কি? ব্ল্যাকহোল কাকে বলে?


ব্ল্যাকহোল কাকে বলে, কৃষ্ণগহ্বর কি, মহাকাশে ব্ল্যাকহোলের অবস্থান
ব্ল্যাকহোল(Blackhole)


মহাকাশের রহস্যম অঞ্চল "ব্ল্যাকহোলের" গভীরে প্রবেশ


মহাকাশের অনন্ত বিস্ময়ের জগতে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর একটি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়। যেটা নিয়ে প্রায়শই অনেকের মাঝেই ভুল বোঝার মতো একটি বিষয়। রাতের আকাশে আমরা যে অসংখ্য গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, তারা এবং ছায়াপথ দেখি, তাদের মাঝে কিছু এমন বস্তু লুকিয়ে আছে যাদের অস্তিত্বই মহাবিশ্বের নিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ব্ল্যাকহোল।



ব্ল্যাকহোলের সংজ্ঞাঃ


অনেকেই জানতে চান, আসলে ব্ল্যাকহোল কি? এর উত্তর যতটা না জটিল, তার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ব্ল্যাকহোল(Blackhole) হলো মহাকাশের এমন একটি অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ এতো বেশি যে, আলো সহ কিছুই এর থেকে পালাতে পারে না। এই ধারণাই ব্ল্যাকহোল কে মহাবিশ্বের অন্যতম চরম বস্তু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যায় ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



ব্ল্যাকহোল কি তা বোঝার জন্য প্রথমেই এর মূল ধারণাটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। ব্ল্যাকহোল আসলে কোনো ফাঁকা জায়গা বা গর্ত নয়। বরং এটি মহাকাশের একটি বিশেষ অঞ্চল যেখানে বিপুল পরিমাণ ভর অত্যন্ত সীমিত জায়গায় কেন্দ্রীভূত থাকে। এই কেন্দ্রীভূত ভর এতোটাই শক্তিশালী মহাকর্ষ ক্ষেত্র তৈরি করে যে এর চারপাশের স্থান-কাল বা স্পেসটাইম চরমভাবে বেঁকে যায়। আমরা জানি, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাকর্ষ হলো স্থান-কালের বক্রতা। আর ব্ল্যাকহোল হলো এই বক্রতার চরম উদাহরণ। জ্যোতির্বিদ্যার অনুসন্ধানে ব্ল্যাকহোল একটি অনিবার্য বাস্তবতা।




ব্ল্যাকহোল সাধারণত অতি বৃহৎ নক্ষত্রের জীবনের শেষ দশায় তৈরি হয়। যখন একটি নক্ষত্রের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়, তখন এটি নিজের বিশাল মহাকর্ষের টানে কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হতে শুরু করে। যদি নক্ষত্রটির আদি ভর যথেষ্ট বেশি হয় (আমাদের সূর্যের ভরের প্রায় ২০ গুণের বেশি), তাহলে এই সংকোচন থামানো সম্ভব হয় না। নক্ষত্রের কেন্দ্রের পদার্থ পরমাণু স্তরের বাধা উপেক্ষা করে একটি অতীব ক্ষুদ্র অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি চলতে চলতে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছায়, যখন এর মহাকর্ষ শক্তি অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আর তখনই সৃষ্টি হয় একটি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া জ্যোতির্বিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। তাই ব্ল্যাকহোল কি, প্রশ্নটির উত্তরে এর গঠন প্রক্রিয়াও চলে আসে।



একটি ব্ল্যাকহোলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর ইভেন্ট হরাইজন। ইভেন্ট হরাইজন হলো ব্ল্যাকহোলের চারপাশের সেই অদৃশ্য সীমারেখা, যা একবার অতিক্রম করলে আর কখনোই ফিরে আসা সম্ভব নয়। এমনকি আলোর পক্ষেও নয়। এটি হলো 'পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন'। ইভেন্ট হরাইজনের ভেতর থেকে আসা কোনো তথ্যই আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। একারণেই ব্ল্যাকহোলকে সরাসরি দেখা যায় না। কারণ আলোকেও এটি গিলে ফেলে। ইভেন্ট হরাইজনের  আকার ধারণ করে ব্ল্যাকহোলের ভরের উপর। ভর যত বেশি হবে ইভেন্ট হরাইজন তত বড় হবে। জ্যোতির্বিদ্যায় ইভেন্ট হরাইজনই হলো ব্ল্যাকহোল গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু। ইভেন্ট হরাইজন আমাদেরকে ব্ল্যাকহোল কি, তা বুঝতে সাহায্য করে।




ইভেন্ট হরাইজনের ভেতরে, ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রে সিঙ্গুলারিটি অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। এটি হলো একটি তাত্ত্বিক বিন্দু যেখানে সমস্ত ভর অসীম ঘনত্বে সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করা হয় এবং যেখানে স্থান-কাল বা স্পেসটাইম অসীমভাবে বেঁকে গেছে। আমাদের বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো সিঙ্গুলারিটিতে ভেঙে পড়ে। সিঙ্গুলারিটি নিয়ে গবেষণা জ্যোতির্বিদ্যা ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সিঙ্গুলারিটি হলো ব্ল্যাকহোলের একেবারে ভেতরের অংশ। ব্ল্যাকহোল কি এই আলোচনায় সিঙ্গুলারিটি একটি রহস্যময় উপাদান। তবে সিঙ্গুলারিটির প্রকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা এখনও নেই।




যেহেতু ব্ল্যাকহোল আলো নির্গত করে না, তাই এদেরকে সরাসরি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যায় না। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পরোক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব নির্ণয় করেন। যেমন, ব্ল্যাকহোল যখন তার চারপাশের গ্যাস বা নক্ষত্র থেকে পদার্থ আকর্ষণ করে, তখন সেই পদার্থ ব্ল্যাকহোলের দিকে পতিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে এক্স-রে নির্গত করে। এই এক্স-রে পর্যবেক্ষণ করে ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতি বোঝা যায়। এছাড়াও ব্ল্যাকহোল তার চারপাশের নক্ষত্র এবং গ্যাস মেঘের গতিপথের উপর তার প্রবল মহাকর্ষের প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব বিশ্লেষণ করেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোল শনাক্ত করেন। ব্ল্যাকহোল কি, এটি জানার পাশাপাশি কিভাবে এদের খুঁজে বের করা হয়, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।



বিভিন্ন আকারের ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বে বিদ্যমান। নাক্ষত্রিক ব্ল্যাকহোল, যা বিশাল নক্ষত্রের পতনের ফলে তৈরি হয়। এদের ভর সাধারণত সূর্যের ভরের কয়েক গুণ থেকে কয়েক দশক গুণ পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে, প্রায় প্রতিটি ছায়াপথের কেন্দ্রে অতিবৃহৎ ব্ল্যাকহোল বা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে। যাদের ভর সূর্যের ভরের লক্ষ থেকে কোটি কোটি গুণ হতে পারে। আমাদের নিজস্ব আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রেও Sagittarius A নামে একটি অতিবৃহৎ ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। এই ধরনের ব্ল্যাকহোল মহাকাশ এবং মহাবিশ্বের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্ল্যাকহোলের প্রকারভেদ নিয়েও জ্যোতির্বিদ্যায় প্রচুর গবেষণা হয়।




সংক্ষেপে বলতে গেলে, ব্ল্যাকহোল কি? তাহলে বলতে হয়, ব্ল্যাকহোল হলো মহাকাশে এমন একটি অঞ্চল যেখানে ভরের চরম কেন্দ্রীভবনের ফলে মহাকর্ষ এতো শক্তিশালী হয় যে ইভেন্ট হরাইজনের ভেতর থেকে কিছুই escape করতে পারে না। এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং শক্তিশালী বস্তুগুলির মধ্যে একটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নিরন্তর ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। যা আমাদের মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক। ব্ল্যাকহোল কি, এই প্রশ্নটি তাই শুধু একটি সংজ্ঞা নয়। এটি জ্যোতির্বিদ্যার এক বিশাল অধ্যায়। এদের মহাকর্ষীয় প্রভাব মহাবিশ্বের বৃহৎ আকারের কাঠামোতেও লক্ষ্য করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.