গরমে ভালো এবং সুস্থ থাকার উপায়
গরমে ভালো থাকবেন কিভাবে
গরমে ভালো এবং সুস্থ থাকার সেরা ১০টি উপায়
প্রতি বছরই গ্রীষ্মকাল আসে তীব্র তাপ আর আর্দ্রতা নিয়ে। এই সময় প্রকৃতি যেমন রুক্ষ হয়ে ওঠে, তেমনই আমাদের শরীরও নানাভাবে প্রভাবিত হয়। তীব্র গরমে ক্লান্তি, পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক এবং বিভিন্ন চর্মরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই গরমে ভালো এবং সুস্থ থাকার উপায়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি এই প্রতিকূল সময়েও আরামদায়ক ও সতেজ থাকতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গরমে ভালো থাকার উপায়, গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং গরম থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে আপনি তীব্র গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন সেই সম্পর্কিত কার্যকরী টিপসগুলো জানতে পারেন।
১. পর্যাপ্ত পানীয় পান করুন: গরমে সুস্থ থাকার সেরা উপায়
গরমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম বেরিয়ে যায়। যার ফলে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এই পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করাই গরমে সুস্থ থাকার উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। শুধু তৃষ্ণা পেলেই যে পানি পান করবেন, বিষয়টা যেনো এমন না হয়৷ বরং সারা দিন ধরেই অল্প অল্প করে পানি পান করতে থাকুন। সাধারণ পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, লেবুপানি, বেলের শরবত, তাজা ফলের রস বা ঘোল গরমে ভালো থাকার উপায় হিসেবে খুব উপকারী। বাজারের জুস বা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো সাময়িকভাবে তৃষ্ণা মেটালেও দীর্ঘস্থায়ী হাইড্রেশনে সহায়ক নয়। গরমে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন এড়াতে ওরস্যালাইন বা লবণ-চিনির শরবত পান করাও গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। যা গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে একেবারেই সঠিক পদক্ষেপ নয়।
২. সঠিক খাবার নির্বাচন: গরমে ভালো থাকার সহজ উপায়
গরমে আমাদের হজমশক্তি কিছুটা কমে যায়। তাই এই সময় সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা গরমে ভালো থাকার উপায়। তৈলাক্ত, মশলাদার ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। এর বদলে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খান। শসা, তরমুজ, লাউ, ঝিঙা, পটল, চিচিঙ্গা, দই ইত্যাদি খাবার শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টাটকা ফলমূল ও শাকসবজি আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, আম, জাম্বুরা, লিচু জাতীয় ফলগুলোতে প্রচুর পানি থাকে। যা শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এবং গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কাজ করে। বাসি খাবার বা রাস্তার খোলা খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ গরমে খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
৩. হালকা ও আরামদায়ক পোশাক: গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন তার রহস্য
পোশাক নির্বাচনে সচেতনতা গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন তার একটি অত্যন্ত সহজ ও কার্যকরী উপায়। গরমে হালকা রঙের সুতির পোশাক পরুন। সুতির কাপড় সহজে ঘাম শোষণ করে এবং বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করে। যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে। গাঢ় রঙের পোশাক তাপ শোষণ করে বেশি। তাই এই সময় হালকা বা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরাই গরমে ভালো থাকার উপায়। আঁটসাঁট পোশাকের বদলে ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এটি শরীরকে আরাম দেবে এবং গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কাজ করবে। প্রাকৃতিক তন্তুর কাপড় যেমন সুতির লিনেন এই গরমে আরামদায়ক এবং গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে পরিগণিত হয়।
৪. রোদ এড়িয়ে চলুন: গরম থেকে বাঁচার অন্যতম প্রধান উপায়
দিনের বেলায় যখন রোদ সবচেয়ে তীব্র থাকে, সাধারণত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তখন বাইরে বের হওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। যদি বের হতেই হয়, তবে ছাতা ব্যবহার করুন। টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ও মুখ ঢেকে রাখুন। সরাসরি সূর্যের আলো গরমে অসুস্থ হওয়ার একটি বড় কারণ। তাই গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে এই সময়টুকুতে indoors থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। গরমে ভালো থাকার উপায় হিসেবে ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। রাস্তার পাশের ফুটপাতে হাঁটার সময় চেষ্টা করুন গাছের ছায়া বা ভবনের ছায়ার নিচ দিয়ে হাঁটতে। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন তাতে সহায়তা করবে।
৫. শরীরকে ঠান্ডা রাখুন: গরমে ভালো থাকার কার্যকর পদ্ধতি
গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার ঠান্ডা পানিতে স্নান করা গরমে ভালো থাকার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। তা যদি সম্ভব না হয়, তবে অন্তত হাত-মুখ ধুয়ে নিন। ভেজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে নিন। ভেজা তোয়ালে দিয়ে ঘাড়, মুখ এবং হাত মুছে নিলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফ্যান বা এসি ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা এসি থেকে হঠাৎ গরমে বের হওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা উচিত। গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন তার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে ঠান্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন।
৬. ত্বক ও চুলের যত্ন: গরমে সুস্থ থাকার অতিরিক্ত টিপস
গরমে ত্বক ঘেমে চিটচিটে হয়ে যায় এবং রোদের কারণে সানবার্ন হতে পারে। তাই গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে ত্বকের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। হালকা, তেলবিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ঘামাচি বা র্যাশ থেকে বাঁচতে শরীর পরিষ্কার রাখুন এবং সুতির পোশাক পরুন। গরমে চুলও সহজে ঘেমে যায়। তাই চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন এবং বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। এটি একদিকে যেমন চুলকে রক্ষা করবে, তেমনই গরমে ভালো থাকার উপায় হিসেবে মাথা ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করবে। গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে শরীর ও ত্বক পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা খুবই জরুরী।
৭. ব্যায়াম ও শরীরচর্চা: সময় ও স্থান নির্বাচন জরুরী
গরমে অতিরিক্ত ব্যায়াম বা strenuous activity শরীরকে দ্রুত ক্লান্ত করে দেয় এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গরমে ভালো থাকার উপায় হিসেবে সকালের প্রথম ভাগ বা সন্ধ্যার পর যখন আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে, তখন ব্যায়াম করুন। দিনের তীব্র রোদের সময় ভারী কাজ বা খেলাধুলা এড়িয়ে চলুন। যদি ব্যায়াম করতেই হয়, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং শরীরকে বিশ্রাম দিন। গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে হালকা যোগা বা stretching করা যেতে পারে যা শরীরের ওপর চাপ কমায়। গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে strenuous exercise এর সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখা অপরিহার্য। সে জন্য ব্যায়ামের সময় হালকা পোশাক পরা ও পর্যাপ্ত হাইড্রেশন নিশ্চিত করা উচিত।
৮. নবজাতক ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্ন:
নবজাতক ও বয়স্কদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকে। তাই গরমে তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরী। গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে তাদের হালকা কাপড়ে রাখুন। পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাবার দিন এবং দিনের বেলার তীব্র রোদ থেকে দূরে রাখুন। তাদের ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। তাদের শরীর ঘেমে গেলে দ্রুত পরিষ্কার করে দিন।
৯. হিটস্ট্রোকের লক্ষণ জানা ও প্রতিকার:
তীব্র গরম থেকে বাঁচার উপায় না জানলে বা সতর্কতা অবলম্বন না করলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। যা একটি জীবনঘাতী অবস্থা। হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো:
✔শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে চলে যাওয়া
✔ত্বক লাল ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া (অনেক সময় ঘাম নাও হতে পারে)
✔তীব্র মাথাব্যথা
✔মাথা ঘোরা
✔বমি বমি ভাব
✔দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
✔অস্থিরতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে এই লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান। শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দিন বা ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিন। আর অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এই জ্ঞানটুকু গরমে ভালো থাকার উপায় হিসেবে জানা থাকা খুবই জরুরী।
১০. অন্যান্য সতর্কতা:
✔অতিরিক্ত চা, কফি বা অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এগুলো শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে। এটি গরম থেকে বাঁচার উপায় নয়।
✔ঘন ঘন ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এটি গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন তার একটি সহজ টিপস।
✔বাইরে থেকে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর ফ্যান বা এসির নিচে বসুন।
✔রাতের ঘুম পর্যাপ্ত রাখুন। এটি গরমে সুস্থ থাকার আরেকটি উপায়।
✔পরিশ্রমের কাজ করলে ঘন ঘন বিশ্রাম নিন। এটি গরমে ভালো থাকার উপায়।
✔গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে সবসময় নিজের শরীরের কথা শুনুন। ক্লান্তি বা অসুস্থতা অনুভব করলে বিশ্রাম নিন।
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ মোকাবিলা করা কঠিন হলেও একেবারেই অসম্ভব নয়। কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করে আপনি তীব্র গরমের মধ্যেও অনেকটা ভালো থাকতে পারেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। পর্যাপ্ত পানি পান করা, সঠিক খাবার নির্বাচন, আরামদায়ক পোশাক পরা, রোদ এড়িয়ে চলা এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখা। এই উপায়গুলো গরমে সুস্থ থাকার উপায়গুলোর মূল চাবিকাঠি। গরম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে এই টিপসগুলো মনে রাখুন এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করুন।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাকে গরমে ভালো থাকার উপায় সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছে এবং আপনি গরমেও কিভাবে ঠান্ডা থাকবেন তার অনেক কার্যকর টিপস পেয়েছেন। তীব্র গরমের মাঝেও সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই প্রত্যাশায় আজকের মতো এই আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করছি।
কোন মন্তব্য নেই