Header Ads

Header ADS

চোখে ছানি পড়লে কি করবেন?

চোখে ছানি পড়লে করণীয় কি?


চোখে ছানি পড়া একটি সাধারণ চক্ষু সমস্যা। যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই দেখা যায়।  এটি চোখের স্বচ্ছ লেন্সটি ধীরে ধীরে ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।  এই আর্টিকেলে আমরা চোখে ছানি পড়লে করণীয়, চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং আধুনিক ও বিকল্প চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চোখে ছানি পড়লে করণীয় কি, চোখের ছানি, চোখের ছানি অপারেশন, চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ সমূহ
চোখে ছানি




চোখে ছানি:


চোখে ছানি (Cataract) হলো চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা হ্রাস পাওয়া। যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়।  এটি সাধারণত বয়সজনিত কারণে হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য কারণেও হতে পারে।


চোখে ছানি পড়ার কারণসমূহ:



বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের লেন্সের প্রোটিন পরিবর্তিত হয়ে ছানি সৃষ্টি করে।

ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে ছানি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

আঘাত: চোখে আঘাত লাগলে লেন্সের স্বচ্ছতা নষ্ট হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতা: এই দুটি অবস্থাও ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: এগুলো চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

UV রশ্মির অতিরিক্ত সংস্পর্শ: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি লেন্সের ক্ষতি করতে পারে।

জেনেটিক কারণ: পরিবারে ছানির ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। 




চোখে ছানি পড়লে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

দৃষ্টির ঘোলাটে হয়ে যাওয়া: চোখের লেন্স ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার ফলে দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়।

রাতের বেলায় দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া: রাতে বা কম আলোতে দেখতে সমস্যা হয়।

আলোতে ঝলক বা হ্যালো দেখা: আলোতে চোখে ঝলক বা হ্যালো দেখা যায়।

রঙের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া: রঙ ফ্যাকাশে বা কম উজ্জ্বল মনে হয়।

দ্বৈত দৃষ্টি: এক চোখে দুটি ছবি দেখা যেতে পারে।

চোখের পাওয়ার বারবার পরিবর্তন: চোখের চশমার পাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। 



চোখে ছানি পড়লে করণীয়:



১. প্রাথমিক অবস্থায়:

চশমা পরিবর্তন: দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করা যেতে পারে।

উপযুক্ত আলো ব্যবহার: পড়াশোনা বা কাজের সময় পর্যাপ্ত আলো ব্যবহার করা উচিত।

সানগ্লাস ব্যবহার: UV রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করতে সানগ্লাস পরা উচিত।

ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এগুলো পরিহার করা জরুরী।

সুস্থ জীবনযাপন: সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। 


২. ছানি উন্নত হলে:

যদি ছানি এতোটাই উন্নত হয় যে দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হয়, তাহলে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। 



চোখে ছানির চিকিৎসা পদ্ধতি:


১. ফ্যাকোইমালসিফিকেশন (Phacoemulsification):

এটি আধুনিক ও সবচেয়ে প্রচলিত ছানি অপসারণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে চোখের লেন্সকে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ভেঙে ফেলে তা সরিয়ে ফেলা হয় এবং একটি কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো ছোট কাট, দ্রুত সুস্থতা এবং কম জটিলতা। 

২. ম্যানুয়াল স্মল ইনসিশন ক্যাটারাক্ট সার্জারি (MSICS):

এই পদ্ধতিতে চোখে একটি ছোট কাটের মাধ্যমে লেন্স সরিয়ে ফেলা হয় এবং কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। এটি উন্নয়নশীল দেশে বেশি ব্যবহৃত হয় কারণ এটি কম খরচে কার্যকর ফল দেয়। 

৩. ফেমটোসেকেন্ড লেজার-সহায়িত সার্জারি:

এই আধুনিক পদ্ধতিতে লেজারের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করা হয়, যা আরও নির্ভুল ও নিরাপদ।  এতে দ্রুত সুস্থতা এবং কম জটিলতা দেখা যায়। 


কৃত্রিম লেন্সের ধরন:


চোখে ছানি অপসারণের পর কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন ধরনের লেন্স রয়েছে:

মনোফোকাল লেন্স: একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে স্পষ্ট দৃষ্টি দেয়।

মাল্টিফোকাল লেন্স: বিভিন্ন দূরত্বে স্পষ্ট দৃষ্টি দেয়, ফলে চশমার প্রয়োজন কমে।

টোরিক লেন্স: অস্টিগম্যাটিজম সংশোধনে সহায়তা করে।

এক্সটেন্ডেড ডেপথ-অফ-ফোকাস (EDOF) লেন্স: মাঝারি ও দূরবর্তী দৃষ্টিতে সহায়তা করে। 



বিকল্প চিকিৎসা: আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি



আয়ুর্বেদে চোখে ছানিকে "তিমির" বলা হয়।  প্রাথমিক পর্যায়ে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা যেমন হার্বাল ড্রপ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং চোখের ব্যায়াম ছানির গতি কমাতে সহায়তা করতে পারে।  তবে উন্নত পর্যায়ে সার্জারি ছাড়া কার্যকর সমাধান পাওয়া কঠিন। 



চোখে ছানি প্রতিরোধে করণীয়:


সানগ্লাস ব্যবহার: UV রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করতে।

সুষম খাদ্য গ্রহণ: ভিটামিন C, E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এগুলো পরিহার করা জরুরি।

নিয়মিত চোখ পরীক্ষা: প্রতি বছর চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। 




চোখে ছানি পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি সময়মতো চিকিৎসা না করলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও চশমা ব্যবহার করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে উন্নত পর্যায়ে সার্জারি একমাত্র কার্যকর সমাধান। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও কৃত্রিম লেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার সম্ভব। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন চোখে ছানি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.