ঘুম থেকে জেগেই প্রতিদিন এই বদ অভ্যাসটি করছেন না তো? এই বদ অভ্যাসটা এখনি না ছাড়লে যেসব ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বেন
স্বাস্থ্যের জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
ঘুম থেকে উঠে মোবাইল দেখা
আজকে প্রযুক্তির এই ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাতে ফোন নেই এমন মানুষ আজকের দিনে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। আমাদের দিনের অনেকটা সময় কাটে এই যন্ত্রের সাথেই। বিভিন্ন কাজ, যোগাযোগ, বিনোদন, তথ্য সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। তবে কিছু অভ্যাস আছে, যা খুবই নিরীহ মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এমন একটি অভ্যাস হলো ঘুম থেকে উঠে চোখ খোলার সাথে সাথেই স্মার্টফোন হাতে নেওয়া। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের এই ডিজিটাল অভ্যাস আজ এক নীরব সংকটে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই অভ্যাস আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা কি আমরা পুরোপুরি জানি?
এই প্রবন্ধে আমরা ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখার ভয়াল পরিণতিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
সকালের সোনালী সময় ও মস্তিষ্কের সংবেদনশীলতাঃ
আমাদের দিন শুরু হয় ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই। এই সময়টা আমাদের শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম থেকে ওঠার পরপরই আমাদের মস্তিষ্ক থাকে সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং তথ্য গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই সময়ে আমাদের মস্তিষ্ক দিনের বাকি সময়ের জন্য একটি মানসিক কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে। সারাদিনের এই অমূল্য সময়ে আমরা কী করি, তার উপর নির্ভর করে আমাদের মেজাজ, মনোভাব এবং কর্মক্ষমতা।
যখন আমরা ঘুম থেকে উঠেই ফোন দেখি, তখন হঠাৎ করেই আমাদের মস্তিষ্ককে আমরা তীব্র নীল আলো এবং অজস্র তথ্যের স্রোতের সামনে ঠেলে দিই। এটি আমাদের প্রাকৃতিক জাগরণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। আমাদের শরীর দিনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বদলে একটি আকস্মিক বৈদ্যুতিক ঝাঁকি পায়। এর ফলে স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কর্টিসল হলো সেই হরমোন যা আমাদের শরীরকে চাপ বা বিপদের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। দিনের শুরুতে কর্টিসলের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বেশি থাকে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোন ব্যবহার এই মাত্রাকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ কর্টিসল মাত্রা দিনের শুরুতেই উদ্বেগ, বিরক্তি এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। যা আমাদের সারাদিনের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থির মেজাজের জন্য ক্ষতিকর।
ঘুমচক্রের স্বাভাবিকতা বিনষ্টঃ
আমাদের শরীর একটি প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে। যাকে সার্কাডিয়ান রিদম বা ঘুমচক্র বলা হয়। এই চক্র আমাদের ঘুম, জাগরণ, হরমোন নিঃসরণ এবং আরও অনেক জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ভোরের আলো চোখে পড়লে আমাদের মস্তিষ্ক বুঝতে পারে যে দিন শুরু হয়েছে। আর তখন ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমে যায় এবং আমরা সজাগ হতে শুরু করি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে স্মার্টফোনের নীল আলো চোখে পড়লে ব্রেন বিভ্রান্ত হয়ে যায়। এই নীল আলো দিনের আলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় মস্তিষ্ক ভুল সংকেত পায় এবং মেলাটোনিন নিঃসরণ আরও দ্রুত কমিয়ে দেয়।
এই কৃত্রিম আলোর প্রভাবে আমাদের প্রাকৃতিক ঘুমচক্র ব্যাহত হয়। দিনের পর দিন এই অভ্যাস চলতে থাকলে রাতে ঘুমে সমস্যা হতে পারে। গভীর ঘুম নাও হতে পারে, অথবা পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরও সকালে ক্লান্তি থেকে যেতে পারে। সার্কাডিয়ান রিদম নষ্ট হয়ে গেলে শুধু ঘুম নয়, আমাদের হজম প্রক্রিয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক শারীরিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সকালে মোবাইল ব্যবহার করে আমরা আসলে নিজেদের শরীরকেই ধোঁকা দিই। যার ফল ভোগ করতে হয় রাতে এবং পরবর্তী দিনগুলোতে।
মনোযোগের অভাব এবং মানসিক ক্লান্তিঃ
ঘুম ভাঙার পরপরই মোবাইল হাতে নেওয়ার মানে হলো, আমরা দিনের প্রথম মনোযোগটি দিচ্ছি বাইরের দুনিয়ার দিকে। নিজের ভেতরের দিকে নয়। সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ ফিড বা ইমেল চেক করতে গিয়ে আমাদের মন অজস্র তথ্যের গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে। ধরুন, আপনি ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ঢুকলেন। সেখানে হয়তো দেখলেন আপনার কোনো বন্ধু অসাধারণ ছুটি কাটাচ্ছে, অথবা সহকর্মী নতুন চাকরি পেয়েছে। এই ধরনের পোস্ট দেখে তাৎক্ষণিক তুলনা, ঈর্ষা বা মন খারাপ হতে পারে। বাস্তব জীবনের সাথে ডিজিটাল জগতের এই তুলনা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয় এবং দিনের শুরুতেই নেতিবাচক অনুভূতি নিয়ে আসে। এই ধরনের ডিজিটাল 'ডুম স্ক্রলিং' (Doom Scrolling) বা শুধু নেতিবাচক খবর বা তথ্যে ডুবে থাকা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
অজস্র তথ্য একবারে মস্তিষ্কে প্রবেশ করলে 'ইনফরমেশন ফ্যাটিগ' বা তথ্যের ক্লান্তি দেখা দেয়। সকালে মোবাইল ব্যবহার করে এই ক্লান্তি আমরা দিনের শুরুতেই নিজেদের উপর চাপিয়ে দিই। এর ফলে মনোযোগের অভাব দেখা দেয়। তখন সহজ বিষয়গুলোতেও মন বসাতে কষ্ট হয়, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয় এবং দিনের কাজে মনোনিবেশ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। স্মার্টফোন ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তাৎক্ষণিক তৃপ্তি (instant gratification) খুঁজতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদী মনোযোগ এবং উৎপাদনশীলতা হারিয়ে ফেলি।
ডিজিটাল আসক্তি এবং ডোপামিন নির্ভরতাঃ
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখা এক ধরনের ডিজিটাল আসক্তির লক্ষণ। স্মার্টফোন আমাদের ডোপামিন সিস্টেমে সরাসরি প্রভাব ফেলে। যখন আমরা ফোনে কোনো নতুন নোটিফিকেশন, মেসেজ বা লাইক দেখি, তখন আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়। ডোপামিন হলো 'ভালো লাগার' বা পুরস্কারের হরমোন। এই তাৎক্ষণিক ডোপামিন রিওয়ার্ড পেতে পেতে আমরা ফোনের উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। এটি এক ধরনের ডোপামিন আসক্তি।
এই আসক্তি এতটাই তীব্র হতে পারে যে, ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই ফোন চেক না করলে অস্বস্তি লাগতে পারে। বাস্তব জগতের আনন্দ বা মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগের চেয়ে ফোনের ভার্চুয়াল জগৎ বেশি আকর্ষণীয় মনে হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্নতা আসে। আর সামাজিক মেলামেশা কমে যায়, পরিবার থেকেও সংযোগ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে আর এতে একাকীত্ব বাড়ে। মোবাইল আসক্তি আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ডিজিটাল অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের পুরষ্কার ব্যবস্থাকে বিকৃত করে দেয়। যার ফলে স্বাভাবিক কাজকর্মে আনন্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকিঃ
শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, শারীরিক দিক থেকেও ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। বিছানায় শুয়ে বা আধশোয়া অবস্থায় ফোন ব্যবহারের সময় আমাদের ঘাড় নিচু থাকে, চোখ স্ক্রিনের খুব কাছাকাছি থাকে এবং মেরুদণ্ড অনেকক্ষণ ধরে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকে। এই অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গি দীর্ঘস্থায়ী হলে ঘাড় ব্যথা, পিঠে ব্যথা এবং 'টেক্সট নেক' (Text Neck) নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে। টেক্সট নেক হলো স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে ঘাড় ও মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক কার্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়া।
মোবাইলের নীল আলো চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, জ্বালা করা বা চোখের পাওয়ার কমে যাওয়ার মতো দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে মাথা ব্যথাও হতে পারে। ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ করে বিছানা ছেড়ে দ্রুত ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে উঠে দাঁড়ানোর সময় রক্তচাপের হঠাৎ পরিবর্তন হতে পারে। যা মাথা ঘোরা বা হালকা মাথা ভারমুক্ত অনুভূতির জন্ম দিতে পারে। শরীরের জন্য এই অভ্যাসটি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর।
শিশু ও কিশোরদের উপর ভয়াবহ প্রভাবঃ
ছোটবেলা থেকেই যদি শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা ঘুম থেকে উঠে স্মার্টফোন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলে, তবে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাদের বিকাশমান মস্তিষ্কের জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। পড়ালেখায় মনোযোগের অভাব, সামাজিক দক্ষতা কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে তাদের খেলার সময় কমে যায়, সৃজনশীল চিন্তা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারা বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরে যায়। এই ডিজিটাল অভ্যাস তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায়ঃ
ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখার অভ্যাস পরিবর্তন করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। সচেতনতা এবং কিছু ছোট পদক্ষেপ এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যেমন–
১. সকালের রুটিন তৈরি: ঘুম থেকে ওঠার পর অন্তত ৩০ মিনিট বা সম্ভব হলে এক ঘণ্টা মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিন। এই সময়ে অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করুন। প্রথম দিন হয়তো ৩০ মিনিট কঠিন মনে হতে পারে। ৫ বা ১০ মিনিট দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
২. বিকল্প কার্যকলাপ: সকালে ঘুম ভাঙলে ফোন দেখার বদলে হালকা ব্যায়াম করুন। যোগা বা মেডিটেশন করুন, বই পড়ুন, খবরের কাগজ দেখুন, বা দিনের পরিকল্পনা তৈরি করুন। নিজের শরীর ও মনের দিকে মনোযোগ দিন।
৩. ফোন রাখুন হাতের নাগালের বাইরে: অ্যালার্ম বন্ধ করার পর যাতে সহজেই ফোন হাতে নিতে না পারেন, সেজন্য রাতে ফোন বিছানা থেকে কিছুটা দূরে রাখুন।
৪. সকালের পরিকল্পনা: আগের রাতেই ঠিক করে রাখুন সকালে উঠে কী কী করবেন। এতে দিনের শুরুটা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে হবে এবং ফোনের দিকে মন কম যাবে।
৫. সচেতনতা বৃদ্ধি: ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো মনে রাখুন। এটি আপনাকে অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য প্রেরণা যোগাবে।
৬. নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ: রাতে ঘুমের আগে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন।
স্মার্টফোন নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হিসেবে ব্যবহার করা। এটি আমাদের অজান্তেই অনেক সর্বনাশ ডেকে আনছে। এটি শুধু একটি ডিজিটাল অভ্যাস নয়, বরং এটি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সার্বিক bienestar বা সুস্থতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি মোবাইল আসক্তির রূপ নিতে পারে। যা ডোপামিন আসক্তি এবং মনোযোগের অভাবের মতো সমস্যা তৈরি করে। দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের সমস্যা, শারীরিক ক্ষতি, যেমন– টেক্সট নেক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা এর ফল হতে পারে।
সুতরাং, আপনার সকালের রুটিন পরিবর্তন করুন। দিনের শুরুটা হোক শান্তিময়, সচেতন এবং উৎপাদনশীল। নিজের শরীর ও মনকে অগ্রাধিকার দিন, স্মার্টফোনকে নয়। এই ছোট্ট পরিবর্তন আপনার জীবনের মানকে উন্নত করতে এবং আপনাকে আরও সুস্থ ও সুখী করে তুলতে সাহায্য করবে। ঘুম থেকে উঠে ফোন দেখা বন্ধ করুন। তারপর দেখুন আপনার দিনগুলো কতটা সুন্দর হয়ে ওঠে!
আরো পড়ুনঃএই এগারো রকমের সমস্যা দূর করুন প্রতিদিন মাত্র এই কয়েক মিনিট হেঁটে
কোন মন্তব্য নেই