Header Ads

Header ADS

জ্বরের কারণ ও লক্ষণ

জ্বর কি কারনে হয়, জ্বরের লক্ষণ কি


জ্বর হলে কি করবো, জ্বর হলে করণীয় কি

জ্বর কিঃ

জ্বর মানব দেহের একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া। যা রোগ বা অসুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি নিজে কোনো রোগ নয়। বরং শরীরের ভেতরের কোনো সমস্যা বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি প্রচেষ্টা। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬° ফারেনহাইট (৩৭° সেলসিয়াস) এর আশেপাশে থাকে। এই তাপমাত্রা যখন নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায়, তখন তাকে জ্বর বলা হয়। সাধারণত, তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইট (৩৮° সেলসিয়াস) বা এর বেশি হলে তাকে জ্বর হিসেবে ধরা হয়। জ্বর একটি সার্বজনীন সমস্যা। যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা জ্বরের লক্ষণ, জ্বরের কারণ এবং জ্বরের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পাশাপাশি জ্বর হলে করণীয় কিছু বিষয় নিয়েও আলোকপাত করবো।


জ্বর কেনো হয়?–জ্বরের কারণগুলো কী কী?

জ্বর হওয়ার পেছনে অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো সংক্রমণ (Infection) বা প্রদাহের (Inflammation) কারণে হয়ে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন কোনো ক্ষতিকর জীবাণু (যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক) বা অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি টের পায়, তখন তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে তাদের মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। এটিই মূলত জ্বরের কারণ। কিছু সাধারণ জ্বরের কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:


১.ভাইরাল সংক্রমণ (Viral Infections): এটি জ্বরের সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ। ফ্লু, সর্দি-কাশি, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, হাম, জলবসন্ত, কোভিড19 ইত্যাদি বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণের ফলে জ্বর হতে পারে। একে অনেক সময় ভাইরাল জ্বর বলা হয়।


২.ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Infections): নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), টনসিল ইনফেকশন, সেপসিস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণেও উচ্চ জ্বর হতে পারে। এই ধরনের জ্বরের চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।


৩.ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal Infections): কিছু নির্দিষ্ট ছত্রাক সংক্রমণের ফলেও জ্বর আসতে পারে। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে কম সাধারণ।


৪.প্রদাহজনিত রোগ (Inflammatory Diseases): রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস, বাউয়েল ডিজিজ ইত্যাদি কিছু প্রদাহজনিত রোগেও জ্বর একটি লক্ষণ হতে পারে।


৫.কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধ সেবনের ফলেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং জ্বর অনুভূত হতে পারে।


৬.তাপমাত্রা জনিত সমস্যা (Heat Disorders): অতিরিক্ত গরম বা হিটস্ট্রোকের কারণেও শরীরের তাপমাত্রা dangerously বেড়ে যেতে পারে। যা কিনা জ্বরের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি।


৭.ক্যান্সার: কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও জ্বর একটি অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে লিম্ফোমা বা লিউকেমিয়ার মতো রক্ত সম্পর্কিত ক্যান্সারে।



৮.অন্যান্য কারণ: অ্যালার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া, টিকা নেওয়ার পর এবং কিছু অটোইমিউন রোগের ফলেও জ্বর হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জ্বরের ক্ষেত্রে কারণ ভিন্ন হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।



জ্বরের লক্ষণগুলো কী কী?–জ্বরের লক্ষণ চেনার উপায়

জ্বরের লক্ষণগুলো সাধারণত নির্ভর করে কী কারণে জ্বর হয়েছে তার উপর। তবে কিছু সাধারণ জ্বরের লক্ষণ রয়েছে যা প্রায় সব ধরনের জ্বরেই দেখা যায়। এই লক্ষণগুলো চিনে রাখাটা খুব জরুরী, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। প্রধান জ্বরের লক্ষণগুলো হলো:


✪শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (উচ্চ তাপমাত্রা): এটি জ্বরের প্রধান এবং সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ। থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে জ্বর নিশ্চিত করা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এর চেয়ে কিছুটা কম তাপমাত্রাকেও কখনো কখনো জ্বর হিসেবে ধরা হয়।

✪শরীর ঠান্ডা লাগা বা কাঁপুনি: তাপমাত্রা বাড়ার আগে বা তাপমাত্রা বাড়ার সময় রোগীর শীত লাগতে পারে এবং শরীর কাঁপতে পারে। এটি শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ার একটি লক্ষণ।

✪মাথাব্যথা: জ্বরের সাথে প্রায়শই মাথাব্যথা থাকে। 

✪শরীর ব্যথা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা: মাংসপেশী ও জয়েন্টে ব্যথা জ্বরের একটি সাধারণ লক্ষণ।

✪ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: জ্বরের সময় শরীর খুব দুর্বল ও ক্লান্ত লাগতে পারে।

✪ক্ষুধামন্দা ও অরুচি: জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার ইচ্ছে কমে যায়। মুখে তখন কোনো রুচি থাকে না।

✪ঘাম হওয়া: তাপমাত্রা কমার সময় শরীর থেকে ঘাম বের হয়।

✪ত্বক লালচে বা গরম হওয়া: জ্বর হলে চামড়া স্পর্শ করলে গরম লাগতে পারে বা লালচে হয়ে যেতে পারে।

✪দ্রুত হৃদস্পন্দন (পালস রেট বৃদ্ধি): শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।


✪অন্যান্য লক্ষণ: জ্বর যে কারণে হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে অন্যান্য কিছু লক্ষণও দেখা দিতে পারে। যেমন– সর্দি কাশি, গলা ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। শিশুদের জ্বরের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো আরও তীব্র হতে পারে।



জ্বরের এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা মেপে নিশ্চিত হওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।



আরো পড়ুনঃ জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.